ঢাকা, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫

২০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

জেন-জি’র রাজনৈতিক সচেতনতা নাকি স্বার্থসচেতনতা?

রোকন শেখ

প্রকাশ: ২০:৪২, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

জেন-জি’র রাজনৈতিক সচেতনতা নাকি স্বার্থসচেতনতা?

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জেনারেশন জেড বা ‘জেন-জি’ প্রজন্মকে একসময় বলা হতো,‘সবচেয়ে উদাসীন ও নিষ্ক্রিয় প্রজন্ম। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ঘটনাবলির পর হঠাৎই যেন তারা রাজনৈতিকভাবে জেগে উঠেছে বলে প্রচার শুরু হয়। বাস্তবে এই জাগরণ ছিল না রাজনৈতিক চেতনার, বরং ছিল ব্যক্তিস্বার্থের প্রতিক্রিয়া।

ফ্যাসিবাদী শাসনের দীর্ঘকালীন প্রভাব, বিকৃত শিক্ষা কাঠামো আর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পদ্ধতিগত দমন—এই তিনটি উপাদানই একে একে এই প্রজন্মের মধ্যে চিন্তা ও প্রতিবাদের ক্ষমতা স্তব্ধ করে দিয়েছে। ফলে তারা দেশের নীতিগত অন্যায়, বিচারহীনতা, গুম-খুন কিংবা রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে কখনোই সক্রিয় হয়নি। অথচ সেই একই প্রজন্ম নিজেদের নিয়োগ, চাকরির নিশ্চয়তা বা ব্যক্তিগত ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিলে হঠাৎই রাস্তায় নেমে আসে।

অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুলাইয়ের আন্দোলন রাজনৈতিক চেতনা থেকে নয়, বরং ‘নিজেদের ভবিষ্যৎ হারানোর ভয়’ থেকেই শুরু হয়েছিল। যদি তখনকার সরকার শুরুতেই তাদের দাবি মেনে নিত তাহলে সেই আন্দোলন হয়তো কয়েক দিনের মধ্যেই নিভে যেত। ইতিহাস প্রমাণ করে, সত্যিকারের রাজনৈতিক সচেতনতা মানে রাষ্ট্র, সার্বভৌমত্ব ও নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে আপসহীন অবস্থান; কিন্তু এই প্রজন্ম সেই অবস্থানে কখনো দাঁড়ায়নি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণও ছিল একেবারে আবেগনির্ভর—তাদের বন্ধু, ভাই বা সহপাঠীদের ওপর নির্মম নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড তাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছিল। অর্থাৎ তা ছিল মানবিক প্রতিক্রিয়া, রাজনৈতিক আন্দোলন নয়।

তারপরও আজ অনেকেই দাবি করে, এই প্রজন্মই নাকি ‘রাজনৈতিকভাবে সচেতন’! অথচ সত্য হলো, তারা এখনও ওয়েলফেয়ার কর্মকাণ্ডকেই রাজনীতি মনে করে, আর ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধাকেই আন্দোলনের লক্ষ্য ভেবে বসে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দেখা গেছে, ভোটাররা প্রার্থীর আদর্শ বা নীতিনিষ্ঠ অবস্থানের চেয়ে কে তাদের জন্য কিছু দিয়েছে তা হিসাব করেই ভোট দিয়েছে। এই প্রবণতাই প্রমাণ করে, তাদের চেতনা রাজনৈতিক নয়, বরং লেনদেননির্ভর।

রাজনৈতিক সচেতনতা মানে দলীয় আনুগত্য নয়, বরং রাষ্ট্র, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও স্বাধীনতার প্রশ্নে অবস্থান নেওয়া। জেন-জি প্রজন্ম যদি সত্যিই সচেতন হতো, তাহলে তারা ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধাচারণে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং সমাজের ন্যায্য দাবিতে সমবেত হতো বহু আগে।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন—তারা এখনো নিজেদের স্বার্থের বৃত্তে বন্দি, যেখানে প্রতিবাদ নয়, সুবিধাই নির্ধারণ করে তাদের অবস্থান।

রোকন শেখ 
তরুণ রাজনীতি বিশ্লেষক
উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়