ঢাকা, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

২৯ আশ্বিন ১৪৩২

ডেইলিদর্পণ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১:০৯, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

গণভোট কী, কীভাবে হয়?

ডেইলিদর্পণ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১:০৯, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

গণভোট কী, কীভাবে হয়?

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গণভোট একটি বিরল অথচ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ২০২৫ সালে সংবিধান সংস্কার ও ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়ন নিয়ে গণভোট আয়োজনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য নতুন করে আলোচনায় এনেছে এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে।

কী এই গণভোট?

গণভোট বা রেফারেন্ডাম হলো একটি সরাসরি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, যেখানে জনগণ সরাসরি ভোট দিয়ে কোনো নির্দিষ্ট আইন, সিদ্ধান্ত বা রাজনৈতিক বিষয়ে মত দেয়। এতে প্রতিনিধিদের ওপর নির্ভর না করে নাগরিকরাই চূড়ান্ত রায় দেন। এটি বাধ্যতামূলক বা পরামর্শমূলক হতে পারে।

গণভোট হয় কীভাবে?

গণভোট আয়োজন একটি কাঠামোগত প্রক্রিয়া। কোনো প্রস্তাব উত্থাপন ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে এর সূচনা হয়। এরপর জনগণের সামনে একটি নির্দিষ্ট প্রশ্ন উপস্থাপন করা হয়—সাধারণত ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ রূপে।

ভোট গ্রহণ হয় নির্ধারিত দিনে, ব্যালট পেপার, ডাকযোগ বা ই-ভোটিংয়ের মাধ্যমে। ফলাফল নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন বা নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষ। ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেলেই সাধারণত প্রস্তাব পাস হয়। তবে কিছু দেশে ৬০ শতাংশ সমর্থন বা অংশগ্রহণের শর্তও থাকে।

বাংলাদেশের গণভোট ইতিহাস

স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনবার জাতীয় গণভোট হয়েছে— ১৯৭৭: রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতি আস্থা যাচাই।, ১৯৮৫: এরশাদের সামরিক শাসনের বৈধতা পরীক্ষা।, ১৯৯১: সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনের বিষয়ে।

তিনটির মধ্যে দুটি হয়েছে সামরিক শাসকের শাসন বৈধতা প্রতিষ্ঠার জন্য। ১৯৯১ সালের গণভোট ছিল একমাত্র সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত গণভোট।

বাতিল গণভোট কীভাবে ফিরল?

২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোটের বিধান বাতিল করেছিল। তবে ২০২৪ সালে হাইকোর্টের এক রায়ে গণভোটের সাংবিধানিক বিধান পুনর্বহাল হয়। সেই রায় চ্যালেঞ্জ না হওয়ায় এখন গণভোট আয়োজনে কোনো আইনি বাধা নেই।

কেন আসছে নতুন গণভোট?

২০২৪ সালের ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। সেই সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে গঠন করে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’, যা নির্বাচনী, বিচারিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের রূপরেখা।

এই সনদের বিষয়ে জনগণের মতামত নিতে গণভোট আয়োজনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। এটি হবে বাংলাদেশে ৩৪ বছর পর প্রথম গণভোট।

মতবিরোধ রয়েছে কখন গণভোট হবে

গণভোট হবে সংসদ নির্বাচনের আগে না সাথে—এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে।

জামায়াতে ইসলামি ও কয়েকটি দল চায় আগেই গণভোট হোক।

বিএনপি ও আরও কিছু দল চায় নির্বাচনের দিনই গণভোট হোক।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, গণভোটের সময় নির্ধারণের বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

অধ্যাপক ড. নিজাম উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, নির্বাচন কমিশনের বর্তমান সক্ষমতা সংসদ নির্বাচনের আগে আলাদা করে গণভোট আয়োজনের উপযুক্ত নয়। তার মতে, একই সঙ্গে নির্বাচন ও গণভোট করলে খরচ কমবে, এবং প্রশাসনিক দক্ষতাও বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মানুষ তিনটি ব্যালটে ভোট দেয়, তাহলে সংসদ ও গণভোট একসঙ্গে হওয়ায় সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক শ ম আলী রেজা বলেন, “রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে দলগুলো গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে।” তাঁর মতে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রশ্নটি পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছেও রেখে দেওয়া যেতে পারে, যদি রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছায়।

আরও পড়ুন