ঢাকা, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

২৯ আশ্বিন ১৪৩২

প্রকাশ: ১৯:২৪, ২৮ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৯:২৪, ২৮ আগস্ট ২০২৫

‘জুলুম ও বৈষম্যমূলক আচরণ অব্যাহত থাকলে সুন্নি জনতা সমুচিত জবাব দিতে পিছপা হবে না’

প্রকাশ: ১৯:২৪, ২৮ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১৯:২৪, ২৮ আগস্ট ২০২৫

‘জুলুম ও বৈষম্যমূলক আচরণ অব্যাহত থাকলে সুন্নি জনতা সমুচিত জবাব দিতে পিছপা হবে না’

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত মজলিসে শূরা (স্থায়ী পরিষদ) সদস্য ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি’র (বিএসপি) চেয়ারম্যান, আলে রাসুল (দ.) হযরতুলহাজ্ব আল্লামা শাহসুফি মাওলানা শায়খ সৈয়দ আল হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল মাইজভাণ্ডারী বলেছেন, ‘বর্তমানে একশ্রেণির লোক ইসলামের মৌলিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়েছে। তাদের কারণে শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। অথচ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ.)-এর সব কর্মের প্রধান উপজীব্য হলো মানবতা, মুক্তি ও কল্যাণ সাধন। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, বৈষম্যহীনতা ও ন্যায়পরায়ণতার।’ বুধবার (২৭ আগস্ট) রাতে চট্টগ্রামের পটিয়ার আমির ভাণ্ডার দরবার শরীফে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে আয়োজিত ১২ দিনব্যাপী সালাওয়াতে রাসুল (দ.) মাহফিলের চতুর্থ দিনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘যারা স্লোগান দেন, আল কুরআনের আলো ঘরে ঘরে জ্বালো, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, এই দেশের কুরআনের আলো জ্বালিয়েছেন আউলিয়ায়ে কেরাম। অথচ যারা খানকা-মাজার লুটপাট ও ভাঙচুর করে, তাদের দ্বারা কখনোই কুরআনের আলো জ্বালানো সম্ভব নয়। বরং তারা প্রকৃতপক্ষে কুরআন-সুন্নাহর আলো নিভিয়ে দিতে চায়। কারণ আউলিয়ায়ে কেরামের খানকাগুলো থেকেই ইসলাম ও কুরআনের প্রকৃত আলো ছড়ায়।’ মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শুধু মিলাদ-কিয়াম, দরুদ-সালাম, মাজার জিয়ারত আর উগ্রবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণে আল্লামা ফারুকীকে হত্যার শিকার হতে হয়েছে। বিগত সরকার এ হত্যার বিচার করেনি। আমরা ভেবেছিলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অন্তত বিচার শুরু করবে। কিন্তু তারাও ব্যর্থ হয়েছে। অবিলম্বে আল্লামা ফারুকী হত্যার বিচার করতে হবে। অন্যথায় সুন্নি জনতা আন্দোলনে নামলে কোনো সরকারের পক্ষেই জনরোষ সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিগত সরকার পতনের পর থেকে এ পর্যন্ত গত এক বছরে হাজারের বেশি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকিদায় বিশ্বাসী আলেম-ওলামাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে এ জুলুম বন্ধ করতে হবে এবং তাদের স্বপদে পুনর্বহাল করতে হবে। জনগণকে বৈষম্যের মাধ্যমে আর প্রতারিত করবেন না।’ বিএসপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘তরিকাপন্থী আউলিয়ায়ে কেরামের অনুসারীরা শান্তিপ্রিয়। তারা সব ধর্ম-মতের সহাবস্থানে বিশ্বাসী। যুগে যুগে তারা নির্যাতিত হয়েছেন, তবুও দেশ ও মানবতার ক্ষতি হয়, এমন প্রতিক্রিয়া দেখাননি। তবে এর মানে এই নয় যে সব অন্যায় চুপচাপ মেনে নেবেন। যদি চলমান বৈষম্যমূলক আচরণ অব্যাহত থাকে, তবে সুন্নি সুফিবাদী জনতা জালেম ও উগ্রবাদীদের সমুচিত জবাব দিতেও পিছপা হবে না।’ তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা প্রমাণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আগামী ১২ রবিউল আউয়াল সারাদেশে নবীপ্রেমিক জনতা কর্মসূচি পালন করবে। অতীতে এসব শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা ও হত্যাকাণ্ড ঘটলেও সরকার সঠিক ব্যবস্থা নেয়নি। এবার প্রশাসনিক অনুমতি প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে এবং পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি সবাইকে ১২ রবিউল আউয়াল (৬ সেপ্টেম্বর, বুধবার) ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আনজুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়ার উদ্যোগে আয়োজিত জশনে জুলুস ও আন্তর্জাতিক শান্তি মহাসমাবেশে যোগদানের আহ্বান জানান। মাহফিলে বিদেশি আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ভারতের উত্তরপ্রদেশের কাছওয়াছা দরবার শরীফের আওলাদে গাউছে পাক, হযরত সৈয়দ শাহ ফয়যান আশরাফ আশরাফী আল জিলানী (হাফিঃ)। বিশেষ মেহমান ছিলেন- মাইজভাণ্ডার শরীফ ওহাব মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন শাহসুফি মাওলানা সৈয়দ ইকবাল ফজল মাইজভাণ্ডারী, সাতগাছিয়া দরবার শরীফের নায়েবে সাজ্জাদানশীন আল্লামা সৈয়দ মোতাসিম বিল্লাহ সম্পদ সুলতানপুরী, আওলাদে আমির আলহাজ্ব শাহসুফি সৈয়দ শামসুদ্দোহা আমিরী প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন আলহাজ্ব শাহসুফি সৈয়দ মামুন রশিদ আমিরী। আলোচনায় অংশ নেন আল আমিন হাশেমী দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন আল্লামা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ছাদেকুর রহমান হাশেমী, বারীয়া দরবার শরীফের নায়েবে সাজ্জাদানশীন আল্লামা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বারী, মাওলানা মুহাম্মদ আবুল মোকাররম নঈমী, মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদি প্রমুখ। নাতে রাসুল (দ.) পরিবেশন করেন শায়ের মুহাম্মদ আসিফ রেজা নিজামী, মুহাম্মদ তানভীর তারেকসহ আরও অনেকে।

আরও পড়ুন