ডেইলিদর্পণ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫৯, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
এক সময় ট্রেনে ট্রেনে নারকেলের নাড়ু বিক্রি করতেন জন্মান্ধ আব্দুল গফুর মল্লিক। চোখে না দেখা এই মানুষটির জীবনের সংগ্রাম ধরা পড়ে কনটেন্ট ক্রিয়েটর মুন্সী এনায়েতের ক্যামেরায়—আর সেখান থেকেই বদলে যায় তার ভাগ্য।
শৈশবে একদল ব্যবসায়ী গফুর মল্লিকের বাবাকে বলেছিলেন, ছেলেকে কোরআন শেখাতে। তারা বলেছিলো, “দুই সিপারা মুখস্থ থাকলে হাত পাতলে ভাতের অভাব হবে না।” কিন্তু ছোট্ট গফুর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন—জীবনে কখনো ভিক্ষা করবেন না।
জন্মান্ধ ও নিঃসন্তান গফুর মল্লিক ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ট্রেনে ট্রেনে নারকেলের নাড়ু ও বাদাম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। যৌবনে তিনি অন্যের নারকেল গাছে উঠে নারকেল নামিয়ে ভাগের অংশ দিয়ে নাড়ু বানাতেন। শারীরিক দুর্বলতা আসার পর গাছে ওঠা বন্ধ করলেও নাড়ু বানানো থামাননি।
প্রতিদিন ভোরে খাটের নিচ থেকে নারকেল বের করে নিজ হাতে খোসা ছাড়ানো, ভাঙা ও কুরানো—সব কাজই করতেন একা। এরপর খানখানাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে বিক্রি করতে যেতেন তিনি। চোখে না দেখা অবস্থায় বহুবার ট্রেনে ওঠার সময় বা ভেতরে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গিয়েছেন তিনি।
তার এই কঠিন জীবনের গল্প উঠে আসে কনটেন্ট ক্রিয়েটর মুন্সী এনায়েতের প্রামাণ্যচিত্রে। সেই ভিডিওতে যুক্ত করা গফুর মল্লিকের মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে অসংখ্য মানুষ আর্থিক সহায়তা পাঠান। মুন্সী এনায়েতের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ভিডিওটি এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ মিলিয়ন মানুষ দেখেছেন। পরবর্তীতে অন্য পেজে ডাউনলোড দিয়ে আপলোড করায় ভিডিওটি একাধিকবার ভাইরাল হয়।
প্রতি তিন থেকে চার মাস অন্তর ভিডিওটি পুনরায় ভাইরাল হলে নতুন নতুন মানুষ তার পাশে দাঁড়ান। ফলে আর ট্রেনে নাড়ু বিক্রি করতে হয় না গফুর মল্লিককে—চলতে থাকে তার শান্তিপূর্ণ জীবন।
সম্প্রতি এক পত্রিকা নতুন করে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে আবারও ট্রেনে নাড়ু বিক্রির দৃশ্য ধারণ করে। সেটিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয় এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজরে আসে। আজ, ৩০ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে তিনি ভিডিও কলে গফুর মল্লিকের সঙ্গে কথা বলবেন এবং সূত্রমতে নগদ আর্থিক সহায়তাও প্রদান করবেন।