ঢাকা, রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

পাকিস্তান-আফগানিস্তান যুদ্ধবিরতি, টিকবে কি এই শান্তি?

আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২:৫৫, ২০ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২২:৫৬, ২০ অক্টোবর ২০২৫

পাকিস্তান-আফগানিস্তান যুদ্ধবিরতি, টিকবে কি এই শান্তি?

ছবি: সংগৃহীত

এক সপ্তাহের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর পাকিস্তান ও আফগানিস্তান অবশেষে ‘তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে’ সম্মত হয়েছে। দুই প্রতিবেশী দক্ষিণ এশীয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর এতটা নাজুক অবস্থায় আর পৌঁছায়নি।

রোববার (১৯ অক্টোবর) কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত আলোচনার পর কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দোহায় কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনার ফলেই এই সমঝোতা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘উভয় পক্ষ তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে এবং স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে যৌথ প্রক্রিয়া গঠনের বিষয়ে একমত হয়েছে।’

কাতারের ঘোষণার পর পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ লিখেছেন, ‘আফগান ভূখণ্ড থেকে সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ হবে। উভয় দেশ একে অপরের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করবে।’

তিনি আরও জানান, ‘দুই দেশের প্রতিনিধিদলের পরবর্তী বৈঠক আগামী ২৫ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বিস্তারিত আলোচনা হবে।’

পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এক্স-এ বলেন, ‘এটি সঠিক পথে নেওয়া প্রথম পদক্ষেপ। আমরা তুরস্কে পরবর্তী বৈঠকে সন্ত্রাস দমন ও যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের জন্য কার্যকর ও যাচাইযোগ্য একটি ব্যবস্থা গঠনের প্রত্যাশা করছি।’

তালেবান সরকারের মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, ‘দুই দেশ শান্তি, পারস্পরিক সম্মান ও সৌহার্দ্যপূর্ণ প্রতিবেশী সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। কোনো দেশ অপর দেশের বিরুদ্ধে বৈরী পদক্ষেপ নেবে না কিংবা কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সহায়তা করবে না।’

তিনি আরও জানান, ‘উভয় পক্ষ একে অপরের নিরাপত্তা বাহিনী, বেসামরিক নাগরিক ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু বানাবে না।’

তালেবান ও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কাতার ও তুরস্ককে মধ্যস্থতার ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।

তবে বিশ্লেষকরা যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। ওয়াশিংটনভিত্তিক স্টিমসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া কর্মসূচির পরিচালক এলিজাবেথ থ্রেলকেল্ড বলেন, ‘এই আলোচনায় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) বা এর সহযোগী গোষ্ঠীগুলোর কোনো ভূমিকা নেই। তাই আফগান তালেবানদের জন্য এদের নিয়ন্ত্রণে আনা অত্যন্ত কঠিন হবে।’

তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত এতটাই ছিদ্রযুক্ত যে বাস্তবে এমন অনুপ্রবেশ বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব।’

পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে আফগান তালেবান সরকারের ওপর টিটিপি ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে। এসব গোষ্ঠীর হামলায় পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইসলামাবাদভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (সিআরএসএস)’–এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে পাকিস্তানে অন্তত ২ হাজার ৪১৪ জন নিহত হয়েছেন, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার ইঙ্গিত দেয়।

পাকিস্তান দাবি করছে, আফগানিস্তানভিত্তিক এসব গোষ্ঠী, বিশেষ করে টিটিপি, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালাচ্ছে। অন্যদিকে কাবুল এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

আফগান রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবদুল্লাহ বাহির বলেন, ‘গত সপ্তাহের পাকিস্তানি বিমান হামলায় বেসামরিক মানুষই বেশি হতাহত হয়েছেন। তবু পাকিস্তান দাবি করছে, তারা টিটিপি সদস্যদের লক্ষ্য করেছে—যা প্রমাণহীন।’

তিনি বলেন, ‘টিটিপি বহু আগে থেকেই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী। তালেবান সরকার তাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে, এমনটা ভাবা অবাস্তব।’

তবে মুজাহিদ রবিবার এক পোস্টে আবারও জোর দিয়ে বলেন, ‘আফগান ভূমি কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।’

বিশ্লেষকদের মতে, দোহা চুক্তি যদি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হয়, তবে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হতে পারে। তবে সীমান্ত সন্ত্রাসবাদ বন্ধে উভয় পক্ষের বাস্তব পদক্ষেপই নির্ধারণ করবে, এই যুদ্ধবিরতি কতটা টেকসই হয়।

এ সম্পর্কিত খবর