সুমন রাফায়েল
প্রকাশ: ১৯:৫৮, ১৮ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:৫৮, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এসেছে, কিন্তু ফিলিস্তিনি অনেকেই মনে করছেন- এটা শান্তির নিশ্চয়তা দেয়নি; বরং অস্থায়ী বিরতি মাত্র। যুদ্ধবিরতি যতই ঘোষিত হোক, যারা টেবিলে নেই বা যাদের স্বার্থ উহ্য রাখা হয়েছে, তাদের অনুপস্থিতি ভবিষ্যতে নতুন ঝামলার কারণ হতে পারে।
সমস্যার মূল একটি দিক হলো- আলোচনার টেবিলটা কারা নিয়ন্ত্রণ করছে। সাম্প্রতিক শীর্ষ সম্মেলনগুলোতে মূল আলোচনায় ছিলেন আরব ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্র; কিন্তু ইসরায়েল ও হামাস- গাজার সরাসরি পক্ষগুলোকেই টেবিলে না বসিয়ে সিদ্ধান্ত হচ্ছে। এতে প্রশ্ন ওঠে, যাদের জীবন ও ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হচ্ছে, তারা কীভাবে উপস্থাপিত হল?
আরব ও ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর নিজেদের স্বার্থ আছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য সংকট- সুদান, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন- এগুলো দেখিয়েছে যে এই দেশগুলো প্রায়ই নিজেদের সুবিধামতো কাজ করে। গাজাও তার ব্যতিক্রম নয়। অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থের কারণে কিছু আরব রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বা সমন্বয় রাখছে; এতে ফিলিস্তিনিরা দুর্বল অবস্থায় পড়ছে।
আরেকটি গুরুতর বিষয় হলো আভ্যন্তরিক বিভাজন। রাজনৈতিক নেতা ও গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ছোটোখাটো প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলে জনগণের বড় স্বার্থ চাপা পড়ে যায়। যদি অভ্যন্তরীণ ঐক্য না থাকে, বাইরের শক্তির খেলায় ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই অভ্যন্তরীণ ঐক্য গঠন করা অত্যন্ত জরুরি।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দরকার। যে চুক্তি বা সমঝোতা হচ্ছে, সেগুলোর ফলে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার কীভাবে নিশ্চিত হব- এখন সেটাই বড় প্রশ্ন। অজানা ও গোপন সমঝোতা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি সমাজকে শক্তিশালী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে সুশৃঙ্খল ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। নাগরিক সমাজ, শিক্ষাব্যবস্থা ও অর্থনীতিও শক্ত হতে হবে যাতে মানুষ বিপর্যয়ের সময় টিকে থাকতে পারে।
সংক্ষেপে- যুদ্ধবিরতি কেবল সময় কেটে দেয়; চূড়ান্ত সমাধান নয়। আসল কাজ হলো ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিত্বে সুসংহত ভয়েস গঠন, অভ্যন্তরীণ ঐক্য, এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্পষ্ট দাবি তোলা। যদি আমরা নিজেরাই ভাগাভাগি হয়ে থাকি, বাইরের শক্তিগুলো আমাদের ভাগ্য আরও সহজে বদলে দেবে। শান্তি চাইলে তা শুধু যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় হবে না—এটা অর্জিত হবে ঐক্য, স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিক কূটনীতির মাধ্যমে।