ঢাকা, রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভাঙলেন রাবির শিক্ষার্থীরা

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯:০৪, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভাঙলেন রাবির শিক্ষার্থীরা

ছবি: ডেইলি দর্পণ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভেঙেছে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এনামুল হকের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন শুরুর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর তারা অনশন ভাঙেন।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিকেল পৌনে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দেন এবং জুস পান করিয়ে তাদের অনশন ভাঙিয়ে দেন।

এ ব্যাপারে বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান সৈকত বলেন, ‘উপাচার্য আমাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যেহেতু সভাপতি নিজে পদত্যাগ করছেন না, তাকে সরাসরি প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে সরাতে হলে দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। তিনি আমাদের ধৈর্য ধরে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন। এই আশ্বাসে আমরা অনশন প্রত্যাহার করেছি।’

এর আগে গতকাল রোববার (২৬ অক্টোবর) বিকেল ৩টা থেকে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতির পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন বিভাগের ৫ শিক্ষার্থী। আজ দুপুর ১টায় অনশনরত অবস্থায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় দুই শিক্ষার্থীকে স্যালাইন দেওয়া হয়। এছাড়া বিভাগের পঞ্চাশাধিক শিক্ষার্থী প্রশাসনের ভবনের ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

অনশনরত শিক্ষার্থীরা হলেন চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মো. সুমন আলী মণ্ডল, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ইলমুল মুনতাহা ও আয়েশা খাতুন হুমায়রা, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ইমন হোসেন ও মো. কাউছার, এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সাদিক হাসান। এদের মধ্যে সাদিক ও ইমন গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তাদের স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।

আন্দোলনরত বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সিয়াম সাদমান বলেন, ‘আমরা তিন দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার আন্দোলন করে যাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে সভাপতির সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করলেও তিনি গুরুত্ব দেননি। অন্য বিভাগ থেকে আসায় তার দায়িত্ববোধের জায়গা কম। তাই আমরা সভাপতির পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করি।’

রাইসুল ইসলাম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এক দফা দাবিতে আমাদের ছয়জন ভাই-বোন ২১ ঘণ্টা ধরে অনশন করেছি। আমাদের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই সভাপতির পদত্যাগ চান। প্রশাসন সভাপতির ব্যতীত বাকি শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন। সভা শেষে তারা বের হয়ে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে অপসারণ করে নতুন সভাপতি নিয়োগ না করা হবে, ততক্ষণ অনশন ও অবস্থান কর্মসূচি চলবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান জানান, ‘উপাচার্য বিষয়টি নিয়ে বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। শিগগিরই বিষয়টির সমাধান হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এনামুল হককে গত জুলাইয়ে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শুধুমাত্র চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরাই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবেন। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান নিয়োগের পর নতুন বিজ্ঞপ্তিতে তার নিজ বিভাগ মনোবিজ্ঞানকেও সংযুক্ত করা হয়। গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা বৈষম্যমূলক শিক্ষক নিয়োগ সংশোধনসহ তিন দফা দাবিতে ২৪ ঘণ্টা সময় বেধে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি মেনে না নেওয়ায় বুধবার তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করেন। এর অংশ হিসেবে তারা রক্ত ব্যানার লেখা, সংবাদ সম্মেলন, মানবন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে বৃহস্পতিবার তারা তিন দফা দাবি থেকে সরে এসে সভাপতির পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলন করেন। গতকাল এক দফা দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে পাঁচজন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেন।

শিক্ষার্থীদের তিন দাবি ছিল- বৈষম্যমূলক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশোধন, ইন্টার্নশিপ ভাতা চালু এবং বিসিএস পরীক্ষায় চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানকে টেকনিক্যাল ক্যাডার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।

এ সম্পর্কিত খবর