রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮:০৭, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে ইয়ুথনেট কর্তৃক জনসচেতনতামূলক র্যালি, মানববন্ধন ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ৯টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে থেকে র্যালি শুরু হয়ে জোহা চত্তর প্রদক্ষিণ করে মানববন্ধনের মাধ্যমে ১১টায় শেষ হয়। উক্ত কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাবি ছাত্র উপদেষ্টা জনাব আমিরুল ইসলাম কনক।
সিসা দূষণ প্রতিরোধের জন্য জনসচেতনতা গড়ে তুলতে প্রতি বছর অক্টোবর মাসে ‘আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ’ সারাবিশ্বে পালিত হয়। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আহ্বানে এবছর ১৯ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সপ্তাহটি পালন করা হয়। এবারের ত্রয়োদশ আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহের ইংরেজি প্রতিপাদ্য হলো ‘No Safe Level: Act Now to End Lead Exposure’। এই প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে মানুষের শরীরে সিসার উপস্থিতি অনিরাপদ হওয়ায় সিসা বিষক্রিয়া প্রতিরোধে এখনই সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নেয়ার প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে।
এ সময় সবার হাতে সিসা দূষণ প্রতিরোধমূলক ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। সেখানে ‘সিসা দূষণ বন্ধ হলে, বাড়বে শিশু বুদ্ধি’ প্রভৃতি স্লোগানে মুখরিত ছিল। সিসার বিষক্রিয়া প্রতিরোধে সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকার ও নীতিনির্ধারণী মহলকে আইন ও নীতিমালা যথাযথভাবে প্রয়োগ করে কঠোর ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে জোর দেওয়া ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য। এ সময় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সিসা দূষণ বিষয়ক লিফলেট ও স্টিকার বিতরণ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ‘কোনও মাত্রাই নিরাপদ নয়; সিসা দূষণ বন্ধে কাজ করার এখনই সময়’। বিশ্বে সর্বোচ্চ সিসা দূষিত দেশের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে থাকা বাংলাদেশে মানুষের রক্তে মাত্রাতিরিক্ত সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু অর্থাৎ দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ শিশুর রক্তে উচ্চ মাত্রায় সিসা আছে। সিসা বিষক্রিয়ার শিকার হলে শিশুদের বুদ্ধি কমে যায়, পড়ালেখায় পিছিয়ে পরে, মনোযোগের সমস্যা হয়, আচরণগত সমস্যা যেমন মেজাজ খিটখিটে, উচ্ছৃঙ্খলতা এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ার লক্ষণ দেখা দেয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সিসা দূষণের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে, যার ফলে বছরে প্রায় ১,৪০,০০০ মানুষ মারা যাচ্ছে। গর্ভবতী নারীদের রক্তে সিসার উপস্থিতি গর্ভপাত, মৃত সন্তান প্রসবসহ নানা ঝুঁকির সৃষ্টি করে। বুদ্ধিমত্তা হ্রাস ও হৃদরোগজনিত মৃত্যুর ফলে দেশের আর্থিক ক্ষতি হয় প্রায় ২৮,৬৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার কারণে দেশে বছরে ৬ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত জিডিপি ক্ষতি হয়।
আলোচনা সভায় পিওর আর্থ বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মিতালী দাশ বলেন, “আমাদের পরিবেশের সকল উপাদান—মাটি, পানি, বায়ু—সিসা দ্বারা দূষিত হচ্ছে। সিসা দূষিত মাটি ও পরিবেশ থেকে এবং বিভিন্ন সিসাযুক্ত ভোগ্যপণ্যের মাধ্যমে সিসা আমাদের শরীরে, মাদের শরীরে এবং খাদ্যচক্রে ঢুকে পড়েছে। এই দূষণ বন্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টি, সক্ষমতা বৃদ্ধি, ভোক্তাপণ্যে সিসার মান নির্ধারণ, অবৈধ সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারি রিসাইক্লিং কারখানা প্রতিরোধ, এবং কঠোর মনিটরিং ও আইন প্রয়োগ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।”
যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করার গুরুত্ব আরোপ করে ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, “সিসা দূষণ আমাদের শিশুদের জন্য খুবই ক্ষতিকর, কিন্তু তা প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রতিটি শিশুরই আছে নিরাপদ, দূষণমুক্ত এবং সুস্থ পরিবেশে বেড়ে ওঠার অধিকার। যুব সমাজের মাধ্যমে সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দূষণ রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব, যা আমাদের শিশুদের জন্য সুস্বাস্থ্য ও সিসামুক্ত নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।”